ডঃ অ রি জি ৎ ভ ট্টা চা র্য
ভারত
আলো জ্বলতেই পর্দা জুড়ে একটা টেলিফোন। তারপর ডায়াল করছে একটি হাত। তারপর দেখা গেল হাতটি রেখে যিনি ডায়েল করছেন তিনি ডাক্তার অশোক গুপ্ত। ডাক্তার গুপ্ত কথা বলছেন সংবাদপত্রের এক অফিসে, জনৈক সম্পাদকের সঙ্গে। ছবির শেষে দেখা যায়, টেলিফোনটি মৃত (লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে), সংবাদপত্র ও সম্পাদকের সঙ্গে ডাক্তারের সব যোগাযোগ ছিন্ন। - সূচনাটি প্রতীকী, যার ব্যঞ্জনা ঘন্টাধ্বনির মতো আমাদের মনকে আলোড়িত করে তোলে ছবির শেষে।
অথচ ইবসেনের নাটকের শুরু অন্যভাবে। খাবার টেবিলে ডাক্তার স্টকম্যানের স্ত্রী এবং বিলিং-এর কথোপকথনের দৃশ্য। বলতে দ্বিধা নেই, ‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল’ নাটকের চেয়ে ‘গণশত্রু’-র সূচনা অনেক বেশি নান্দনিক। অবশ্য ভুললে চলবে না, দুটি ভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশিত।
‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল’ নাটকটি অবধারিতভাবেই চিহ্নিত করে ক্ষমতার রাজনীতিকে। এছাড়া রয়েছে আরো কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিষয়, বিশেষ করে আর্থিক মুনাফা, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও কর ব্যবস্থা সম্পর্কিত, এবং অন্যগুলো এই একই কাঠামোর ভেতরে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-সম্পর্কিত, বিশেষ করে আমলা, গণমাধ্যম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থান ও দ্বন্দ্ব-সম্পর্কিত। অন্য আরো কিছু বিষয় উঠে এসেছে সমাজের ভঙ্গুর ভাবাদর্শগত ভিত্তি থেকে। যেমন- ভণ্ডামি, দ্বৈতনীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং ভয়ের রাজনীতি ও তার কৌশল। এর পাশাপাশি দেখা যায়, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান ও তার ভূমিকা। যেমন– মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতাবলম্বীদের কোণঠাসা করে রাখা এবং অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা করা ইত্যাদি।
সত্যজিৎ রায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন ‘মন্দিরভিত্তিক রাজনীতি’কে, অর্থাৎ ধর্মের নামে জল কীভাবে স্থানীয় অর্থনীতি ও রাজনীতির খেলায় পরিণত হয় সেদিকে। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রটিকে ধরে নেওয়া যেতে পারে হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে। ভিন্ন মাধ্যম, ‘গণশত্রু’-র বিচারে এটি আগাগোড়া মনে রাখা জরুরি। তারও চেয়ে জরুরি মনে রাখা যে, ‘গণশত্রু’ ইবসেনের নাটকের অনুবাদ নয়, ভাবানুবাদ। ভাবানুবাদ বলেই ডা. স্টকমানের বড় ভাই পীটার স্টকমান বাংলা ছবিতে রূপান্তরিত হয়েছেন ডা. গুপ্তের ছোট ভাইয়ে। বাংলায় প্রবেশ পায়নি ডা. স্টকমানের দুটি শিশুপুত্র এজডিফ্ ও মোর্টেন, বদলে তৈরি হলো একটি নতুন চরিত্র, ডা. গুপ্তের ভাবী জামাতা। এরকম আরো কিঞ্চিৎ বাহ্যিক অদল-বদল হয়েছে বাংলা ছবিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ঘটনা - জল দূষণ ও ডাক্তারের প্রতিরোধ-সংগ্রাম যেমন অপরিবর্তিত আছে, তেমনি নাটকের ‘দ্য পিপলস মনিটর’ সংবাদপত্রটি ছবিতে হলো ‘জনবার্তা’। নামকরণে জনগণের গন্ধ ছড়ানো জরুরি ছিলো।
পরিবর্তন-পরিমার্জনের যতখানি স্বাধীনতা ভাবানুবাদে নেওয়া সম্ভব, সত্যজিৎ রায় তাঁর ছবিতে নিয়েছেন, কিন্তু যা সযত্নে রক্ষণীয় - মূলের প্রস্বর (Intonation) - তা তিনি আগলেছেন সতর্ক প্রহরীর মতো। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। সতর্ক প্রহরা ছাড়া ইবসেনের নাটক পরিবেশন সম্ভব নয়। যার নাটকে বলার চেয়ে না বলা থাকে বেশি, ঘটনা যত না ঘটে দর্শকের চোখের সামনে, তার চেয়ে বেশি ঘটে আড়ালে, সংলাপ কিংবা ঘটনা যখন হয়ে ওঠে প্রতীক, তাকে ভাষান্তরে, উপরন্তু ভিন্ন মাধ্যমে, সার্থকভাবে পরিবেশন করা কি যে-সে নির্দেশক এবং অভিনেতা অভিনেত্রীর কাজ?
সুখের বিষয়, বাংলা ভাষায়, ভাবানুবাদে, এবং চলচ্চিত্র মাধ্যমে যিনি এই দুঃসাহসিক কাজে ব্রতী হলেন, নিজের মিডিয়ামে তিনিও বিশ্বের প্রথম সারির শিল্পী। প্রসঙ্গত মনে না করে পারছি না যে, রবীন্দ্রনাথ কিংবা বিভূতিভূষণের গল্পই হোক, কিংবা হোক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অথবা শঙ্করের গল্প, সত্যজিৎ রায়ের হাতে তারা ভিন্ন মাত্রায় আয়ত। শুধুই বক্তব্য পরিবেশন নয়, কীভাবে বলা হবে - কতটুকু কথায়, কতটুকু হাবভাবে, কতটুকু কিছু না বলে, কতটুকু শুধু ছবিতে, দৃশ্যে - তাই বারবার নির্ধারণ করেছে সত্যজিতের স্বকীয় শিল্পবোধ। পরিমিতিবোধ, মিতভাষণ তাঁর শিল্পরীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এবার যাঁর কাজে হাত রেখেছেন তিনি, সেই দুর্ধর্ষ নাট্যকারও বেছে বেছে শেষমেশ গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন কোপেনহেগেনের সেই রয়্যাল থিয়েটারে, যার প্রসেনিয়ামের উপরে খোদিত ছিল - “Ej blot til Lyst”- কেবল প্রমোদের জন্য নয়।
তুলনামূলকভাবে, ইবসেনের অনেক সহজ নাটক ‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল্’ - সমাজদর্শনের নাটক, লেখা হয়েছিলো একশো আট বছর আগে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে। আজও যা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক সুদূর প্রাচ্যে, সত্যজিৎ রায়ের নিজ বাসভূমেও। আর ইবসেনের মতো স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের এতো বড়ো প্রবক্তা পৃথিবীতে ক’জন নাট্যকার? ইবসেনের সমাজদর্শনের মূলমন্ত্র সত্য, স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, বিবেক - চমৎকার ধ্বনিত হয়েছে ‘গণশত্রু’-তে। ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মূল সংঘাত প্রবাহের অন্তরালে সত্যজিৎ অসাধারণ দক্ষতায় বাজিয়েছেন ইবসেনের একটি প্রিয় সুর - আধ্যাত্মিকতা বনাম কুসংস্কারের সংঘাত। প্রতিদিন যাঁরা মন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে চরণামৃত (দূষিত জলের মিশ্রণে তৈরি) পান করছে সেই জনগণের চেয়েও ঢের বেশি বাণ বর্ষিত হয়েছে তাদের শোষক - মন্দির স্থাপয়িতা, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান এবং সেই সঙ্গে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি। সুন্দর দেখানো হয়েছে যে, ডা. গুপ্তের ধর্মবোধ মন্দির-নির্ভর নয়, কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী নয় (আমরা জানি, হিন্দুধর্ম Institutional ধর্ম নয়)। মানুষের মঙ্গলকামনা এবং ব্যাধির প্রকোপ থেকে তাদের রক্ষা করাই তাঁর জীবনের পবিত্র ব্রত - জীবসেবাকেই ধর্ম মেনেছেন তিনি। জীবসেবার মোড়কে ধন-যশের দাসত্ব তাঁর সাধনায় নেই। ডা. গুপ্তের বিরামহীন সংগ্রামে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, জলদূষণ প্রকৃতপক্ষে গোটা সমাজের দুর্নীতির প্রতীক, যার দূরীকরণে সদাজাগ্রত তাঁর বিবেক। ছবির অন্তিম মুহুর্তে, নানা প্রতিকূলতায় বিধ্বস্ত, সামাজিকভাবে নিঃসঙ্গ, ডা. গুপ্ত নাটকের ডা. স্টকমানেরই প্রতিরূপ।
কিন্তু, সত্যজিৎ রায় আরম্ভ করেছিলেন যেমন ভিন্নভাবে, শেষও করেছেন অন্যভাবে। সেই স্বাধীনতা তাঁর আছে, যেহেতু ছবিটি নাটক অবলম্বনে একটি ভিন্ন স্ক্রিপ্ট, নাটকের অনুবাদ নয়। কিন্তু মূলের প্রস্বর বিকৃত হয়নি এতটুকুও। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এই পর্বে এসে নাটকে যা ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা তিনি ছবিতে সরাসরি উপস্থাপন করেছেন, আর নাটকে যা জরুরি উচ্চারিত ছবিতে তা নীরব ইঙ্গিতে শেষ করলেন সত্যজিৎ। অমনোযোগী ইবসেন পাঠকের এখানে ছবিটি ভুল বোঝার প্রচন্ড সম্ভাবনা।
নাটকের অন্তিম মুহূর্তে দেখা যায়, ডা. স্টকমানের দুই শিশু পুত্রকে তাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ আর স্কুল যেতে বারণ করায় তিনি ছেলেদের আশ্বাস দেন যে তিনি-ই তাদের পড়াবেন বাড়িতে। বাড়িতেই স্কুল খুলবেন তিনি, রাস্তা থেকে কয়েকজন পরিত্যক্ত ছেলে-ছোকরাদের ধরে আনতে বলেন ছেলেদের। তিনি চান, তাঁর অবর্তমানে এই তরুণ প্রজন্মই সম্পন্ন করবে তাঁর অসমাপ্ত কাজ। ঐ নিঃসঙ্গ ক্লান্ত বিধবস্ত মুহূর্তেও উত্তেজিত হয়ে তাদের তিনি বলেন তাঁর নতুন আবিষ্কারের কথা, যা তিনি শিখিয়ে যেতে চান তাদের।
কী শেখাতে চান তিনি আত্মজ শিশুদের, ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে? কী আবিষ্কার করেছেন তিনি তিক্ত লবণাক্ত অভিজ্ঞতার বিনিময়ে? তিনি শেখাতে চান একাকীত্বের অপরিসীম শক্তি ও ক্ষমতা- “the strongest man in the world is the man who stands alone” ১ - নিজেকে জানা হয়েছে তাঁর, আর তাই আত্মজ শিশুদের কাছে দৃপ্ত বিশ্বাসে বলে ওঠেন: “Yes! I'll even go so far as to say that I'm one of the strongest men in the whole world!” ২ এই আত্মদর্শন, ব্যক্তির মধ্যে এই আধ্যাত্মিক রূপান্তর ইবসেন অন্বিষ্ট ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বিবর্তনবাদের চূড়ান্ত বিন্দু।
কেবল গল্পটির দিকে যাঁদের নজর, তাঁদের মনে হবে নাটকটি শেষ হচ্ছে হতাশায়। কিন্তু প্রতিটি পংক্তি, শব্দ এবং পংক্তির মধ্যেকার শূন্যস্থান গভীর মনোযোগ সহকারে পড়লে বোঝা যাবে যে, নাটকটি বস্তুত বিশ্বাস আর আশার সুরে দীপ্র। ডা. স্টকমানের মধ্য দিয়ে ইবসেন যেন আমাদের বলতে চাইলেন : দেখো এই হচ্ছে সমাজ আর জনগণ। কিন্তু ভুলো না, তোমার মধ্যে রয়েছে অফুরান শক্তি, জাগিয়ে তোলো তাকে, আত্মবিশ্বাস অর্জন করো, স্থির থাকো আদর্শে, জয় সুনিশ্চিত। নাটকের যবনিকা মুহূর্তে ডা. স্টকমান যখন শোনান তাঁর অভিজ্ঞান, তখন তাঁর কন্যা পেট্রা শক্ত মুঠিতে বাবার হাত চেপে ধরে বলে ওঠে “(with eyes full of faith) Father!”৩
অতীব আনন্দের বিষয় যে, সত্যজিৎ তাঁর ছবিটিও শেষ করেছেন আশা-র আলোকে। এক আন্তর বিভায় উদ্ভাসিত ডা. গুপ্তের মুখমন্ডল। যেহেতু ছবিতে শিশু দুটি অনুপস্থিত, তাই নাটকের সেই কয়েকটি সংলাপ শোনা গেলো না ছবিতে। পক্ষান্তরে, দেখা গেলো চরম সংকটের মুহূর্তে ডা. গুপ্তের পুত্রতুল্য ভাবী জামাতা এবং সঙ্গে দু'চারজন তরুণ ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ধবনি দিতে দিতে এসে ডা. গুপ্তের পাশে দাঁড়ায়, এসে দাঁড়ায় ‘জনবার্তা’-র প্রাত্তন সহ-সম্পাদক এবং বর্তমানের এক স্বাধীন সাংবাদিক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইবসেন ১৮৮১ সালে ‘ঘোস্টস’ নামে একটা নাটক লিখেছিলেন। নাটকের বিষয়বস্তু ছিল উনিশ শতকের ভিক্টোরিয়ান যুগের সমালোচনা। অনাচার, কুসংস্কার, গোঁড়া ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি তীব্র কটাক্ষ হানা এই নাটক সমাজে রোষের সৃষ্টি করে। গণপ্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় ইবসেনকে। দর্শকদের এমন প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের প্রতিউত্তরে পরের বছর ইবসেন তাঁর ‘অ্যান এনিমি অভ দ্য পিপল’ রচনা করেন। সত্যজিৎকেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ১৯৬০ সালে সত্যজিৎ ‘দেবী’ নির্মাণ করেন। এই সিনেমায় তিনি বাঙালি হিন্দুদের কুসংস্কার ও গোঁড়ামিকে তুলে ধরেন। ফলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ও হিন্দুধর্ম অবমাননা করার অভিযোগ ওঠে সত্যজিতের বিরুদ্ধে। ক্যারিয়ারের শেষে এসে ‘গণশত্রু’ দিয়ে তারই জবাব দেন সত্যজিৎ। ইবসেনের নাটকের মূল স্বর – একাকীত্বের শক্তি – অক্ষুণ্ণ রয়েছে সত্যজিতের ছবিতে। এই একাকীত্ব দুটি বিশ্বযুদ্ধোত্তর সাহিত্যের নিঃসঙ্গতার মতো আত্মধ্বংসী নয়, এই একাকীত্ব সৃজনী সোপান, নিজেকে চেনার তৃষিত লগ্ন। এত মিতায়ত ছবির শেষ পরিসরটুকু, এত সাংকেতিক, এত মিতভাষী যে মনে হয় ইবসেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন সত্যজিৎ। অন্যান্য সিনেমা থেকে ভিন্ন সত্যজিতের এই কাজ।
তথ্যসূত্র -
১। Michal Lachman: Performing Character in Modern Irish Drama, 2018, Palgrave Macmillan, Pg.No. 26
২। Henrik Ibsen: An Enemy of the People, 1999, Oxford University Press, Pg.No. 105.
৩। Edmund J. Farrell: Exploring Life through Literature, 1973, Scott, Foresman, Pg.No. 72.
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি –
Andrew Robinson : Satyajit Ray: The Inner Eye: The Biography of the Master Film- maker, Zed Books, 2021.
Chidananda Das Gupta : The Cinema of Satyajit Ray, National Book Trust, India, 2001.
Evert Sprinchorn : Ibsen’s Kingdom: The Man and His Works, Yale University Press, 2021
Marie Seton : Portrait of a Director: Satyajit Ray, Penguin Books, 2003.
Toril Moi : Henrik Ibsen and the Birth of Modernism, OUP Oxford, 2008.