শা ন্ত নু গ ঙ্গা রি ডি
ভারত
কেউ জানে না ওরা ঠিক কোথা থেকে এখানে এসেছিল। একটা সাইকেল রিক্সায় চেপে চার জন এসে নেমেছিল। দুটি কিশোর আর একটি দুধের মেয়েকে বগলদাবা করে তিরিশের কোঠায় পা দেয়া বিধবা মহিলা এসে উঠে ছিলেন আড়াই কামরার টালির বাড়িতে। মাঝারি সাইজের দুটি তোরঙ্গ একটি হোল্ডঅল। একটা কাপড়ের পুঁটলি রিক্সার পেছনে লটকানো ছিল। পুঁটলিতে যে বাসন কোসন আনা হয়েছে সেটা ঝনঝন আওয়াজ জানান দিচ্ছিল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বস্তু ছিল আকর্ষণের বিন্দু। সেটি একটি সেলাই মেশিন। সাড়ে তিন জন যাত্রীসহ এত মালপত্তর নিয়ে আসার জন্য রিক্সাওলাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।পাড়ার ট্যাটুদা বিজ্ঞের মতো জানিয়ে ছিল ওটা সিঙ্গার কোম্পানির সেলাই মেশিন।সেই থেকে শুরু। দিনে বারো চোদ্দ ঘণ্টা কাজ। কান পাতলে সেলাই মেশিন চালানোর শব্দ শোনা যায়। সপ্তাহে দু চার দিন বান্ডিল বান্ডিল জামা কাপড় কারা এসে নিয়ে যায়। সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি হয়। পাড়ার আধভাঙা টালির বাড়িটার নাম দর্জিবাড়ি হয়ে গেল।
পাড়ার সবচেয়ে আলিশান বিল্ডিংয়ে যারা বসবাস করেন তাঁরা সবচেয়ে পুরনো। শুধু পুরনো নয় বলা যায় এলাকার আদি বাসিন্দা।বাড়ির বর্তমান কর্তা সেবা নিবৃত্ত হয়ে বাগান পরিচর্যায় মনোনিবেশ করেছেন। বাড়ির বড় ছেলে ধ্যানবিন্দুর স্ত্রী পামেলা বোটানির লেকচারার। ধ্যানবিন্দু আইটি সেক্টরে উচ্চপদে সমাসীন। ধ্যানবিন্দুর পিতা জ্ঞানবিন্দু এককালের ব্যাংক আধিকারিক। সেই শ্বশুরমশাই এখন পামেলার বাধ্য ছাত্র।আপাতত জ্ঞানবিন্দুর নজর পড়েছে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালে। যে কাজটা আগে কেউ করেনি, তিনি সেই কাজটাই করে দেখালেন। গাছের দেয়াল বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর আন্তরিকতায় বাড়ির বাউন্ডারি দেয়ালকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শেকড় মেলেছে লতানে গাছ ফাইকাস পুমিলা। লতাবট। এটি এক ধরণের ভাইন্স। এরা দেয়ালের তেমন ক্ষতি করে না, সিমেন্টের প্লাস্টারে ঢুকে না। বরং সবুজ আচ্ছাদনে ঢেকে রেখে প্রাচীরের গাম্ভীর্য বাড়িয়ে দেয়। লাভের মধ্যে লাভ হলো আধ বিঘা জমির কর্নার প্লটের দু দিকটার দেয়ালে আর রং করাতে হচ্ছে না।রংয়ের খরচ বাঁচিয়ে যত না খুশি হয়েছেন তার চেয়ে এক শো গুণ বেশি আনন্দ পেয়েছেন উল্টোপাল্টা দেয়াল লিখনের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেয়ে। জ্ঞানবিন্দুর ইচ্ছে ছিল লম্বা চওড়া সীমানা প্রাচীরের গায়ে কেউ এসে মনোমুগ্ধকর গ্রাফিত্তি এঁকে দিক। কিন্তু এক সকালে উঠে দেখেন লেখা রয়েছে: "আর চুলকোবেন না, আর চুলকোবেন না— হাতের নাগালে জালিম জাদু লোশন!"
"আচ্ছা, এই লতানে গাছ দিয়ে পুরো বাড়িটা ঢেকে দেওয়া যায় না? তাহলে তো আর বাইরের অংশ রং করাতে হবে না। বাড়ির ইন্টেরিয়র রং করলেই চলবে।"পুত্র বধূ জানাল, "আইডিয়াটা খারাপ না, দেখতে খুবই সুন্দর লাগবে। বাড়ির নামের সঙ্গেও মানানসই হবে। কিন্তু বাবা, এ জাতীয় গাছকে বাউন্ডারি ওয়াল অব্দি সীমাবদ্ধ রাখাটাই ঠিক আছে। ঘরের বাহির দেয়ালে লাগালে ঘর ঠান্ডা থাকবে বটে, তবে কিছু উটকো সমস্যার জন্ম হবে। ঠিকমতো দেখাশোনা করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ঝটপট বেড়ে ওঠা লতাপাতা নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রিম করতে হবে। দেয়ালের টেম্পার নষ্ট হবার সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া ঘরের মধ্যে পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যাবে। তারপর ধরুন, জানালা দরজা দিয়ে শুধুমাত্র উঁকি মেরে ওদের মন ভরবে না। অন্দর মহলে ঢুকে যেতে চাইবে এই অ্যাগ্রেসিভ লতানে গুল্ম।"
উত্তরাধিকার সূত্রেই এই আলিশান বাড়িটিতে বিবিধ গাছের সমাবেশ। সেদিন একটা খালি গামলা পেয়ে সেটাতে জল ভরে জাপানি লোটাসের বীজ ফেলেছিলেন জ্ঞানবিন্দু।। সেই বীজ থেকে রং বেরংয়ের জাপানি পদ্ম ফুটে চারদিক হাসিতে ভরিয়ে দিয়েছে।
দোতালা বাড়িটার পোশাকি নাম জ্ঞানবৃক্ষ। এই নাম ধ্যানবিন্দুর প্রপিতামহ জ্ঞানাঙ্কুরের দেয়া। সে সময় এদিকটায় সুড়কি বিছানো রাস্তা ছিল। মিনিট দশেক হাঁটলে মার্টিন রেলের কু-ঝিক-ঝিক গাড়ির দেখা মিলত। বাড়িটায় যতটুকু পরিসর রয়েছে তার মাত্র এক পঞ্চমাংশে ইমারত। বাকি প্রাঙ্গন জুড়ে গাছ গাছালিদের অবাধ গতিবিধি। কী নেই সেখানে। আম লিচু পেয়ারা জামরুল এলাচ দারুচিনি সজনে কামরাঙা চালতা খেজুর ঘোড়ানিম। আদরের নাতনিটিও মা বাবা ও ঠাকুরদাকে বাগান পরিচর্যায় সাহায্য করে থাকে।কোথা থেকে জোগাড় করে এনে হাফ ডজন তুঁতেগাছ লাগিয়ে দিয়েছিল সেই আদুরে মেয়ে। সর্বার্থের সুখের সংসার।
তবে ইদানিং এক অদ্ভুত ধরনের দুশ্চিন্তা পরিবারের সদস্যদের ভাবিয়ে তুলেছে। অভিজাত গাছবাড়ির আদরের মেয়ে কিনা শিখছে কুরুশের কারিকুরি। পরিবারের মান সম্মান ডুবিয়ে পুজো পেন্ডালে স্টল দিয়েছে। কুরুশের পুতুল, কুরুশের জামা, কুরুশের ঢাকনা ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটির তৈরী গৃহসজ্জার রকমারি সামগ্রী হট কেকের মতো বিক্রি হয়ে গেছিল। আদরের নাতনি জ্ঞানেশ্বরীর এই উদ্যোগ ঠাকুরদা জ্ঞানবিন্দুর একেবারেই পছন্দ হয়নি। বাবা ধ্যানবিন্দু, মা পামেলা —কেউই অনুমোদন করেননি।
বাগানের গাছপালাদের নাম মুখস্থ। বাড়ির খুঁটিনাটি জিনিস পত্তর নজর এড়ায় না জ্ঞানেশ্বরীর। সেদিন চিলে কোঠায় অযত্নে ফেলে রাখা কিছু একটা দেখে ছিল সে। কাপড়ের ওপর সেলাইয়ের কাজ। একটা পারাবত পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে। "যাও পাখি বলো তারে / সে যেন ভোলে না মোরে।" কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো।ঠাকুমা সৌদামিনীদের আমলে কাপড়ের উপর সূচিশিল্পের মাধ্যমে কোনো দার্শনিক উক্তি লেখে ফ্রেম করে ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়ার রেওয়াজ ছিল। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসার তিলমাত্র ইচ্ছে নেই তার। আজ প্রাইভেট টিউটর আসবেন না। একটু বেলার দিকে তুঁতে গাছগুলোর দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সে।"বুঝলে তো খুকি, আমাদের হলো রাক্ষুসে খিদে। তোমার তুঁতেগাছের পাতাগুলো খাবলে খুবলে খেয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি ভাই।মন খারাপ করো না তো। কাজের কথায় আসি। চলো, প্রথমেই তোমাকে অ্যাপ্লিকের কাজ শিখিয়ে দিচ্ছি। এই দ্যাখো, এভাবে ছোট ছোট কাপড়ের ডিজাইন করে সেটা মেইন ফ্যাব্রিকের উপর সেলাই করে বসাতে হবে। দেখলে তো, অ্যাপ্লিকের বিছানার চাদর বালিশের ওয়াড় বানিয়ে ফেলাটা কত সহজ। অ্যাপ্লিকের শাড়ি সালোয়ার কামিজও বানাতে পারো।তুমি তো সেলাই ফোড়াই ভালোই জানো। আসলে, সবটাই তোমার ঠাকুমার আশীর্বাদ। নাও, নিজের ডিজাইনের কাঁথা স্টিচ কিভাবে করবে ঝটপট শিখে নাও তো।…তুঁতেফল তো বেশি নেই। এই চার পাঁচখানা রয়েছে। খেয়ে ফেলো তো। খাদ্যগুণে ভরপুর পুষ্টিকর খাবার।… কুরুশের কাজে তো তুমি ওস্তাদ। তাহলে উল বোনাটা বাদ যাবে কেন। তোমার এলেম আছে ভাই। সামনের শীতে মায়ের জন্য একটা কার্ডিগান বুনে দিলে শি উইল বি সাপোর্টিং ইউ।… তুমি যা হতে চাও সেটা হবার চেষ্টা করে যাও। কেউ আটকাতে পারবে না। আরেক দিন এসো, বাই বাই।"শুঁয়োপোকাগুলো গুঁটির ভেতর ঢুকতে না ঢুকতে জ্ঞানেশ্বরীর হুঁস ফেরে। দর্জি বাড়ির ছোট ছেলে তমাল প্রায়ই বোটানিক্যাল গার্ডেন যায়। কানাঘুষায় শোনা যায় সে নাকি উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে এবং আলিশান গাছবাড়ির প্রতিটি সদস্যকে উচিত শিক্ষা দেবে। নিজের হাতে বানানো পেটিকোট সায়া নাইটি ম্যাক্সি ফ্রক ইত্যাদি নিয়ে এক দুপুরে তমালের মা চয়নিকা জ্ঞানবৃক্ষ-এর কলিং বেল বাজিয়ে ছিলেন। বস্ত্র সামগ্রী নিয়ে একটি কথাও বলার সুযোগ দেয়নি ওঁরা। প্রভুর ইশারায় বাড়ির দারোয়ান দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল বিধবা মহিলাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে মোটামুটি রেজাল্ট করেও কীভাবে কে জানে শহরতলির কোনো এক কলেজে পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়ে ছিল তমাল। কষ্টে সৃষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে পোস্ট-ডক্ করে সেই ছেলেই এখন হাওয়া ভবনে কাজ করছে।দর্জিবাড়ির হাল ফিরেছে। সেই আড়াই কামরার ঘর আর নেই। পৌনে দুই কাঠা জমির ওপর তিন তলার বয়নিকা বিল্ডিং। একটা সময় ছিল যখন আকাশে বেলুন পাঠিয়ে দৈনন্দিন আবহাওয়ার খবর জোগাড় করতে হতো। এখনো পাঠানো হয়। তবে এখন চলমান সেটেলাইট চিত্রে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের চালচলন তথা সমুদ্রের মন মেজাজ মুহূর্তে মুহূর্তে ধরা পড়ে।আজ অফিসের কাজে বিশেষ বৈচিত্র্য ছিল না। আগন্তুক তিন চার দিন জলহাওয়ার তেমন কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনের লক্ষণ ফুটে উঠছে না। অফিসের ব্যালকনিতে রাখা গার্ডেন চেয়ারে বসে শান্তিতে জিরিয়ে নিচ্ছে তমালশেখর।"ও ভায়া শুনছ! তুমিই তো পুরসভার লোকদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলে কয়ে পার্কের লাইটের আলোগুলো স্তিমিত করে দিয়েছ। আমরা এখন শান্তিতে ঘুমোতে পারছি গো। তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।""এমন সুরেলা কণ্ঠে কথা কইছ! কে গো তুমি?""আরে ভাই, আমিও তোমাদের মতোই দর্জি। আই মিন, আমি হলেম এই পার্কের টুনটুনি। দর্জি পাখি টুনটুনি। বড় বড় পাতাকে মুড়ে চঞ্চুকে সূচের মতো ব্যবহার করি। গাছের আঁশ অথবা মাকড়সার জালের সুতো দিয়ে পাতা সেলাই করে নবপ্রজন্মের জন্য বাসা গড়ে থাকি আমরা।""ও তাই! আমি তো ভাবতাম বাবুইরাই বুঝি দর্জি পাখি।""ও উপকারী ভাই, তাহলে কানে কানে গোপন কথাটা বলেই ফেলি তোমায়।… প্রাণেশ্বরীর জন্যে তোমার মন কেমন করে না বুঝি! মেয়েটি যখন মালবেরি গাছের কাছে যায় তখন বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ওর দিকে নিবিড় চোখে চেয়ে থাকা হয় না বুঝি?""দাঁড়াও দাঁড়াও, কী সব আছে বাজে বকছ…!"ফুরুৎ করে উড়ে যায় টুনটুনি। আকাশে দু তিন পাক মেরে ফিরেও আসে।"বলছিলাম কী, একটা আবদার রাখবে ভাই। আমাদের খুকির দেড় মাস বয়েস হলো। ওকে বেলুনে চড়িয়ে আনতে পারবে ভাই। আমদের ডানা তো অতটা উঁচুতে উঠতে পারেনা। খুকি আমার খুব ডানপিটে, তোমাদের বেলুনে চড়ে অনেক উঁচুতে উড়ে যেতে চায়। সুনিতা হতে চায়।" ডিপোজিট টার্গেট ফুলফিল না হওয়া, অনাদায়ী ঋণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি— সবকিছু মিলিয়ে রক্তচাপ তরতরিয়ে বেড়ে যেত জ্ঞানবিন্দুর। ব্যাংকের আধিকারিক হিসেবে কাজের সুবাদে কারণে অকারণে প্রায়শই মেমো খেতে হতো তাঁকে। এ জনম বৃথা গেল। জ্ঞানবিন্দুর স্বপ্ন ছিল সামনের জন্মে হাওয়া-অফিসে চাকরি করবেন। "পরশুদিন বৃষ্টি হবে" বলে পূর্বাভাস দেবার পর কোনো কারণে মাটি না ভিজলেও কেউ এসে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না। মেমো ধরাবে না। আগামী জীবন তূরীয়ানন্দে কাটিয়ে দেয়া যাবে। সে বুঝি আর হবার নয়। নাকের ডগায় বেড়ে ওঠা দর্জিবাড়ির বড় ছোকরাটা অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় হাওয়া-অফিসের চাকরি বাগিয়ে নিল। তমালশেখর মেট অফিসের সহকারী আবহবিদ হলেও তাঁদের পারিবারিক বস্ত্র ব্যবসার হাল ধরে আছেন মা চয়নিকা, ভাই কামাল ও বোন বয়নিকা। শহরের বিখ্যাত মল ইউনিভার্সাল-এর চার তলার এক চতুর্থাংশ জুড়ে বয়নিকা-র ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। শহর থেকে কিছুটা দূরে ব্যাক অফিস, মানে কারখানা-কাম-অফিস। পাড়ার বয়নিকা বিল্ডিংয়েও কিছু কিছু কাজ হয়ে থাকে। তুঁত গাছগুলোয় ফুল আসে ফল আসে। রেশম পোকারা ডিম পাড়ে। ডিম থেকে শুঁয়োপোকার জন্ম হয়।জন্মের খিদে নিয়ে কচি পাতা খেতে খেতে শুঁককীটেরা জ্ঞানেশ্বরীর বোজম-ফ্রেন্ড হয়ে যায়। মন খারাপের অবকাশ থাকে না জ্ঞানেশ্বরীর।কোকুনে প্রবেশের আগে ওরা জ্ঞানেশ্বরীকে জ্ঞান বিতরণ করে, "আমাদের জীবন তো টেনেটুনে দু মাসের। সে তুলনায় তোমাদের জীবন যে অ-নে-ক অনেক বড় গো। সুবিশাল বিস্তৃত পরিসর। আমরা দূর্বাঘাস হলে তোমরা হলে আকাশলঙ্ঘি তমালতরু। শুধু কনফিডেন্সটা ধরে রাখো। আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনে সবকিছু পাওয়া যায়।" "জান তো কামিনী সতী কোমল কুসুম অতি/ দূর হ’তে দেখিবারে, ছুঁইবারে নহে সে—/ দূর হ’তে মৃদু বায়, গন্ধ তার দিয়ে যায়...।"রবি ঠাকুরের পঙ্ক্তিগুলো স্মরণ করিয়ে দিতেই বোধকরি জ্যোৎস্না স্নাত রাতের জোনাকি জ্বলা সন্ধ্যায় পদ্ম দিঘির পাড়ে অগণিত কামিনী ফুল ফুটেছে। স্নিগ্ধ সুবাস রাতের পরিবেশকে আনন্দ ঘন করে তুলেছে। প্রকৃতি প্রদত্ত এই ফুলটির গন্ধ মন খারাপের অনুভূতি মুছে দিয়ে যে কোনো মানুষকে খুশিতে মাতোয়ারা করে দিতে পারে।
নিঝুম রাত। জেগে আছে জ্ঞানেশ্বরী। একটি ঝিঁঝিপোকা থেকে থেকে "পাঠাও পাঠাও" বলে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। কামিনী ফুলের দূত হয়ে এসে দুটো জোনাকি গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে গেল।তমালশেখরদের কোম্পানিতে এসিস্ট্যান্ট ডিজাইনারের চাকরির জন্য যত্ন নিয়ে আবেদন পত্র লিখল। সিভি তৈরি করল। তার সাথে পোর্টফোলিগুলো অ্যাটাচ করে ইমেইলটা পাঠিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল জ্ঞানেশ্বরী। টুনটুনিতে টুনটুনালো—পরের দিন কাকভোরে এক জোড়া টুনটুনি এসে বয়নিকা-র ছাদে বসল। শুনশান পাড়াটা তখনো জেগে ওঠেনি। মর্নিং-ওয়াকারের দলবল একটু বাদেই স্ব স্ব মহিমায় বেড়িয়ে পড়বে।
টুনটুনি যুগল একে একে দু বার জ্ঞানবৃক্ষ আবাসের কলিংবেল টিপে দিয়ে হাসতে হাসতে উড়ে চলে গেল।
