মেয়েদের অধিকারের জন্য যারা পথে নেমেছে তাদের জন্য
শরতকালীন দেবী পূজার প্রাক্কালে কথাটাই লিখলাম । শারদোৎসব লিখতে মন চাইলো না । এই সময়ে দক্ষিণ সুইডেন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে কাশফুল ওয়েবজিন। ২০২৪ প্রথম বছর । এর আগে ছিলো শুঁয়োপোকা । সেও বছরে একবার বেড়িয়ে, কোন প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেত । কাশফুল ও বছরের বিশেষ সময়ে এক আগমন বার্তা নিয়ে আসে । এই নিয়ে সুললিত কবিতা থেকে রচনা অনেক লেখা হয়েছে । যা অল্প সময়ের জন্য আসে তাকে ঘিরে আয়োজন করে প্রকৃতি ও মানুষ । এই ঋতুকে ঘিরে আমাদের আয়োজন অনেক । আয়োজনের একটি অভিমুখ থাকে । সেই মুখ ক্রমশ ধর্ম থেকে ধর্মতলা মুখী । শারদপত্রিকা এই উপাচারের একটি উপাদান । কিন্তু এবারে সুর কেটে গেছে ।
প্রবাসী মানুষেরা কয়েক প্রজন্ম কাটিয়ে ফেলে তাদের শিকড়কে মাটিতে স্থাপন করতে । আমাদের সকাল ভাঙে ইন্টারনেটে ভারতের খবরে । নির্বাচন থেকে ষ্টক মার্কেট , ন্যানো থেকে ইনফোসিস । এভাবেই আমাদের সত্ত্বা দ্বিধায় ভোগে । এই দ্বিধা অস্থির করে যখন দ্রোহকাল সমুৎপন্ন । প্রসঙ্গ তিলোত্তমা আর সেই আমাদের কয়েক প্রজন্মকে অস্তিত্বের লড়াইয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । ভারতকে আমরা মা ভাবি । অনেকেই ভাবি । অনেকের ধর্ম ভাবে আটকায় । সনাতনীদের পূজা দেবীকেন্দ্রিক এবং এই যে পূজা থেকে কার্নিভাল, যার মধ্যে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হবে সেও দাঁড়িয়ে আছে দশপ্রহরণধারিণীর আবহমান থিমের উপর । স্বদেশী , সশস্ত্র বিপ্লবী এবং বিবেকানন্দ বা নেতাজী সুভাষ চন্দ্রও কিন্তু শক্তিরূপিণী দুর্গায় দেখেছিলেন এক পরাভূত জাতির জাতীয় উত্থান । বাঙালির রক্তে দুর্গাপূজার মহিমা ঐতিহাসিক । কিন্তু সে কী, সেই আত্মবিস্মৃত । এক প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিলোত্তমার বিচারের দাবী , দ্বিমাসাধিক অতিক্রান্ত । রাজপথে নেমে আমাদের ভবিষ্য ডাক্তারেরা আজ আমরণ অনশনে । সত্তরের বারুদের গন্ধ বাতাসে মিলিয়ে গেছে চার দশক । এই স্থানাঙ্কের দ্রোহ আমরা দেখিনি আজ চার দশকের বেশি । বাতাসে ঝড়ের আভাস পড়ে নিতে আসুবিধা হয়না । এটা ল্যাটিন শব্দ মনে ধরেছিলো সুযোগ পেলে ব্যাবহার করি 'Quis custodiet ipsos custodes' মানেটা অনেকেই জানে Who will watch the watchmen। ভারতীয় গণতন্ত্রের কলকব্জা গুলি এত মজবুত যে রাষ্ট্রই যখন ধর্ষক তখন তার বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরেকটা নির্বাচন বা নিস্ফল প্রসব যন্ত্রণা। শুধু ভারতই বা কেন ? নির্বাচনী গণতন্ত্র আজকে এই উদ্ধতের প্রবল অত্যাচারের মুখে পৃথিবীর সব জায়গাতেই ভাঁড়ামোতে পরিণত হয়েছে । ছোটবেলায় চে গুয়েভরার জীবনের গল্প পড়ার সময় অশ্রু সজল হয়ে উঠতাম । বুঝতে পারতাম না, কেন একটা মানুষ, শুধু সশস্ত্র বিপ্লব করবে বলে দেশ দেশান্তরে ছুটে বেড়িয়েছে । অনেকদিন লেগে গেলো সেটা বুঝতে যে I know you are here to kill me. Shoot, coward, you are only going to kill a man । গল্প গাথার মত এই সব লাইন । জানিনা উৎসব মঞ্চের পাশেই রাতজাগা অভুক্ত ডাক্তারদের অন্দোলনের শেষে কি হবে । তবু তিলোত্তমা সেই চেতনা যা এই বাঙালি নামের মরে যাওয়া একটা বন্দোবস্তে বান এনেছে । তিলোত্তমা আমাদের চে । অত্যন্ত ব্যাথিত হৃদয়ে পূজায় বসবো আর, আর জি করের সামনে রাখা ভাঙচোরা মূর্তিটি ভেসে উঠবে দেবী বন্দনার প্রতিটি মন্ত্রে । প্রতিবাদের উৎসব হোক এবার ।
অলঙ্করণ - শিল্পী দীপ্ত দাশগুপ্ত