top of page
Writer's pictureSambandh

Justice of multiverse

Updated: Oct 12

সূ র্য্য শে খ র ব্যা না র্জী

সুইডেন


প্রথম পর্ব 


হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো অজিত।  ঢুকেই ব্যোমকেশ কে বললো, খবর টা দেখেছো ?


- দেখলাম অজিত, এরকম নির্মম একটা ঘটনা আমার সত্যান্বেষন এর ক্যারিয়ারে কোনোদিন দেখেছি বা শুনেছি বলে মনে পড়ছেনা। এখন তো দেখছি জাল ওষুধ, অঙ্গ পাচার আর নেক্রোফিলিক নীলছবির কারবার তৈরী হয়েছে।  জাস্ট নিতে পারছিনা অজিত।  এ কেমন অসুখ ভাই?


- আমরা কি হাতে হাত রেখে বসে থাকবো, ব্যোমকেশ ?


- মোটেও না অজিত। কিন্তু কি বলোতো, লড়াই টা লড়তে হবে এক বিরাট নেক্সাসের বিরুদ্ধে।  পুলিশ, প্রশাসন, টাকা সব এদের কাছে আছে, তাই একার পক্ষে এর সত্যান্বেষন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। 


- তাহলে উপায়  ?


- টেলিফোন ডিরেক্টরি তে "M " এর পাতা টা খোলো। 


- খুললাম।  


- প্রদোষ নাম এ কাউকে পাচ্ছ?


- তিন জন আছে, কার কথা বলছো?


- ২১ নম্বর রজনী সেন রোড এ মনে হয় একজনই আছে।  


অজিত ডায়াল করলো নম্বরটা।  ওপারে ফোনটা তুললো একটা কম বয়সী ছেলে 

- হ্যালো 


- প্রদোষ মিত্র বাবুর সাথে কথা হতে পারে?


- না, দাদা তো একটা বিশেষ কাজে কাঠমান্ডু গেছে, আজ রাত্রে ফিরবে, আপনি কে বলছেন?


- আমি অজিত ব্যানার্জী বলছি, খুব গুরুতর দরকার ওনার সাথে।  আমার নম্বরটা লিখে রাখুন। উনি এলেই বলবেন ফোন করতে।  


- অজিত ব্যানার্জী মানে ব্যোমকেশ বাবুর বন্ধু ?

- হ্যাঁ।  


- নম্বর লাগবেনা, দাদা যাওয়ার আগে বলে গেছিলো আপনার ফোন আসবে, এসেই আপনাদের সাথে কথা বলবে বলেছিলো দাদা।


- আচ্ছা ধন্যবাদ, আপনার নাম টা ?


- আপনি বলবেন না আমায়, তুমি বলুন, আমার নাম তপেশ রঞ্জন মিত্র।  ফেলুদা আমার জেঠতুতো দাদা।


সংক্ষেপে ব্যোমকেশকে পুরো কথোপকথন জানালো অজিত। ব্যোমকেশ চুপ করে বসে একটা সিগারেট ধরালো।


দ্বিতীয় পর্ব 


রাত তখন প্রায় ২ টো।  ব্যোমকেশের ফোনটা  বেজে উঠলো। 


- বলুন প্রদোষ বাবু, কাঠমান্ডুর হিসেবটা বুঝতে পারলাম না , মগনলাল তো দুবাইয়ের জেলে।  সেটা তো আপনি ভালো করেই জানেন। তাই, এই  জাল ওষুধ, নেক্রোফিলিক নীলছবি আর অঙ্গ পাচারে ওর কোনো হাত নেই।  


- আপনি ঠিকই ধরেছেন। মগনলালের দুবাই তে এরেস্ট হওয়ার পর আই বি এর সাথে আমিও ডেপুটেশন এ গেছিলাম।  তখনি জেনেছিলাম মগনলালের খাস লোক, মনোহর নেপাল থেকে অঙ্গ পাচারের সিন্ডিকেটটা চালাচ্ছে। তাই ওইদিকটা একটু বাজিয়ে দেখে এলাম। 


- নেক্সট কি ভাবছেন ?


- সেন্ট্রাল এজেন্সীর সাথে আমার এখন তেমন কোনো যোগাযোগ নেই, তবে একজন আছেন যার সাথে দেখা করা যেতে পারে। 


- কে বলুন তো ?


- এখন তো ২ টো বেজে গেছে, কাল রাত্রে একবার দেখা করা যাক। 


- অবশ্যই।  


- নিউটাউনে অমেঠী ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের আশপাশটা বিকেলের পর পুরো খালি থাকে।  কাল রাত ৮ টা নাগাদ ওখানে আসতে পারবেন?


- ঠিক আছে, কাল দেখা হচ্ছে।  


তৃতীয় পর্ব 


ব্যোমকেশ, অজিত, তপেশ আর ফেলুদাকে নিয়ে হরিপদবাবু বাইপাস ছাড়িয়ে নিউটাউনে পৌঁছতে প্রায় ৮:২০ বেজে গেলো।  লালমোহন বাবু গেছেন সাহিত্যিক দের ধর্ণামঞ্চে, কিন্তু হরিপদ বাবুকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নিজের গাড়িটা দিয়ে। 


অমেঠী ক্যাম্পাস এর  জায়গাটা একদম শুনশান।  বাইরে খালি একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে।  হরিপদ বাবু ওই কালো গাড়িটার পেছনে ওনার গাড়িটা রাখলেন।


কালো গাড়ির ভিতর থেকে আমাদের গাড়িটা দেখতে পেয়েই মনে হয়, একজন লোক বেরিয়ে এলেন। হাতে ক্রাচ নিয়ে। 

ফেলুদা এগিয়ে গেলো ভদ্রলোকের দিকে। 


- ধন্যবাদ মিস্টার রায়চৌধুরী  আসার জন্যে।  


- ধন্যবাদ কি জন্যে? যে শহর আমাদের পরিচিতি দিয়েছে , সেখানে এতবড়ো একটা নারকীয় কান্ড ঘটে গেলো, সেটার সুরাহা করাটা তো আমাদের নৈতিক কর্তব্য।  আর হ্যাঁ, তুমি আমার চেয়ে বয়সে ছোটো, কাজেই আমাকে কাকাবাবু বলেই সম্বোধন কোরো। 

- আলাপ করিয়ে দি, ইনি  সত্যান্বেষি ব্যোমকেশ বক্সী এবং ওনার বন্ধু শ্রী অজিত বন্দোপাধ্যায়, আর এ আমার ভাই তপেশ রঞ্জন।


তপেশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন কাকাবাবু।  সন্তুটা বছর তিনেক হলো আমেরিকাতে আছে।  ঘটনার পর রোজ রাত্রে  ফোন করে কাকাবাবুর থেকে খবর নেয়।  পুজোর সময়ে কলকাতা আসবে, তার মধ্যে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। 


ব্যোমকেশ জিজ্ঞেস করলো, রাজা, একটা কথা বলো।  দিল্লী সূত্রে কোনো গোপন খবর পেয়েছো কি? 


- না, আমার দিল্লিতে যে কানেকশন গুলো আছে তারা একদম মুখে কুলুপ বেঁধে রয়েছে, কেউ কোনো টুঁ শব্দটুকুও করছে না। 


ফেলুদা বলে উঠলো, সেটাই স্বাভাবিক, এই সিন্ডিকেটের শাখা একদম অক্টোপাসের শুঁড়ের মতো ছড়িয়ে আছে।  কিন্তু যদি একটা শুঁড়ে বড়োসড়ো আঘাত করা যায়, তাহলেই গোটা শরীরটা কেঁপে উঠবে। 


তপেস বললো, ঠিক বলেছো ফেলুদা, একদম সেই কৈলাশের চট্টরাজের মতো।


ঠিক, বললো ফেলুদা।


কাকাবাবু বললেন, এই মুহূর্তে তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই, যা বুঝছি।  সুপ্রিম কোর্টে নেক্সট শুনানি আছে সামনের সোমবার। ঐদিন ওই কলেজের প্রিন্সিপালকে আর মেইন একিউসডকে কাঠগড়া এ তুলবে।  লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে কেসটার। আমি কোর্টের থেকে স্পেশাল পারমিশান পেয়েছি, সঙ্গে দুইজন কে নিতে পারবো কোর্টরুমের ভিতর।  ফেলু, তোমার কোল্ট রিভলভারটা এখনো আছে তো। 


ফেলুদা একটা বাঁকা হাসি হেসে বললো, জানতাম আপনি এটা বলবেন।  আশা করি, কোর্ট রুমে মেটাল ডিটেক্টর কে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে রিভলভার নিয়ে ঢুকবেন, সেটাও নিশ্চই ভেবে দেখেছেন। 


- ও তুমি ভেবোনা। গিরিডি থেকে একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক একটা বিশেষ বাক্স বানিয়েছেন, যেটা মেটাল ডিটেক্টর কে ফাঁকি দিতে পারে ।


ব্যোমকেশ বললো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাস্তা থেকে একটা রিভলভার আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, যেটা কখনো ব্যবহার করতে হয়নি, আমিও যাবো তোমাদের সাথে।  শেষ বয়সটা বিচারের স্বার্থে জেলেই কাটিয়ে দেব নাহয় ।


কাকাবাবু বললেন, ওই স্পেশাল বাক্সটা আমি দিল্লীতে গিয়েই পাবো, তাই আমাদের প্লেন বা ট্রেন এ গেলে চলবে না।  আমরা গাড়িতে বেরোবো। আজ বুধবার, শনিবার  সকালে বেরিয়ে যাবো, রাত্রে বেনারসে স্টে করে, রবিবার সকালে বেরিয়ে রাত্রে দিল্লী পৌঁছবো।


কাকাবাবু বেরিয়ে গেলেন।  হরিপদ বাবু বাকিদের নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিলেন।  পুরো রাস্তায় কেউ কোনো কথা বললো না। তোপসে কিছু একটা বলতে গেলো, ফেলুদা ওকে চুপ করিয়ে বললো, ডিসাইড করে নিয়েছি রে তোপসে, এই অনাচারের শেষ দেখে ছাড়বো। 


- কিন্তু, ফেলুদা।


- আর কোনো কিন্তু নয়, এর কোনো কিন্তু হয় না ।



শেষ পর্ব 


রবিবার সকাল ৭ টার মধ্যে কাকাবাবু, ফেলুদা আর ব্যোমকেশ পৌঁছে গেলো কোর্ট চত্বরে। অনেক অনুরোধ সত্বেও তোপসে আর অজিত কে কলকাতাতেই  থাকতে বলা হলো। 


কাকাবাবু একজন বেঁটেখাটো টাক মাথা লোকের সাথে কিসব কথা বলছে।  লোকটা কাকাবাবুকে ৩ টে ছোট ছোট কেস দিলো। ফেলুদা এক কোনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলো। ব্যোমকেশ জিজ্ঞেস করায় বললো, খেলা জমবে। 


কাকাবাবু এসে একটা করে বাক্স ফেলুদা আর ব্যোমকেশকে দিয়ে বললো,  কোর্টের পেছনে একটা ধাবা আছে, ওদের টয়লেট এ গিয়ে এটার মধ্যে রিভলভার গুলো ঢুকিয়ে নাও। 


ব্যোমকেশ বললো, বাক্স গুলো দিয়ে কিরম  একটা ডিমের খোল আর চিংড়ির খোসার  মতো গন্ধ আসছে না? 


ফেলুদা আবার মুচকি হেসে বললো, বললাম না, খেলা জমবে। 


কোর্টরুমে তিনজনে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষন পর মহামান্য বিচারপতি উপস্থিত হলেন। সবার সাথে ওনারা তিনজনও দাঁড়ালেন। কিছুক্ষন পরে ডাকা হলো হলো কলেজের প্রিন্সিপাল আর ঘটনার মেইন একিউসডকে।  তারা কাঠগড়ায় দাঁড়ালো।  


কাকাবাবু ইশারা করলো দুজনকে।  "ইটস টাইম "।


নিজেদের বন্দুক গুলো জাস্ট বের করতে যাবে সবাই, হঠাৎ সকলের নজর গেলো একদম সামনের দিকের সারিতে বসা এক টাকমাথা বেঁটে খাটো বয়স্ক লোকের দিকে।  


ব্যোমকেশ বললো, এই লোকটাই তোমায় কেস গুলো দিলো না, রাজা? 


কাকাবাবুও হাঁ করে তাকিয়ে।  


বয়স্ক লোকটা পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করেছে। ওটা কি পিস্তল? নাকি অন্যকিছু? সামনের দিকটা পেনের মতো। তাক করে আছে কাঠগড়ার দিকে।  যেখানে আসামিরা দাঁড়িয়েছিল সেখানে এখন কেউ নেই, শুধু ধোঁয়ার কুন্ডলী। ফেলুদা গলা নামিয়ে বলে উঠলো, আনাইহিলিন। 


কোর্টরুমে সবাই স্তম্ভিত। কোথায় গেলো আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো দুটো মানুষ? দুজন পুলিশ এগিয়ে গেলো ওই বয়স্ক লোকটার দিকে।  


কিন্তু কোথায় কে? লোকটা ইতিমধ্যে নিজের কব্জিতে ঘড়ির মতো কিছু একটা জিনিসে চাপ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে  কোর্টরুম থেকে।  




উপসংহার 

বাড়ির বৈঠকখানায়ে বসে ফেলুদা, তোপসে আর লালমোহনবাবু। আজব ব্যাপার মশাই, কি বলেন? দুটো জলজ্যান্ত লোক স্রেফ ধোঁয়া  হয়ে গেলো ? আর  যে কিনা ধোঁয়া বানালো, সে নিজেও হাওয়া।  ভাবা যায়?


সকাল থেকে টেবিলের উপরে একটা রেজিস্টার্ড পোস্ট এর চিঠি রাখা ছিল।  ফেলুদা চিঠিটা এগিয়ে দিলো জটায়ুর দিকে।  বললো, পড়ে দেখুন, আজ সকালেই এসেছে।  

জটায়ু পড়তে লাগলেন 


প্রিয় প্রদোষ,

তুমি যখন এই চিঠিটা পড়ছো আমি তখন অন্তরীক্ষের পথে।  নতুন রকেটটা ভালোই তৈরী হয়েছে। আশা করি গন্তব্যে পৌঁছে যাবো এইবার। 

রাজা রায়চৌধুরী যেদিন আমার কাছে এসেছিলেন পুরো প্ল্যানটা নিয়ে, সেদিন ওনার সাহস দেখে নিজেই চমকে উঠেছিলাম।  ভাবলাম তোমরা যদি বিচারের স্বার্থে নিজেদের পুরো জীবনটাকে জলাঞ্জলি দিতে পারো, তাহলে আমি এমনিতেও পৃথিবী ছেড়ে অন্তরীক্ষে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমার কি অজুহাত থাকতে পারে?  মনে একটা শঙ্কা এসেছিলো বটে।  সেটা হলো আমার আনাইহিলিনটা জীবন্ত প্রাণীদের ধোঁয়ায় রূপান্তরিত করতে পারে । কিন্তু এই নারকীয় ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা কি আদৌ কোনো জীব? মানুষ যে নয়ই সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না।  


আমার তৈরী রেমেমব্রেনের কিছু বড়ি তোমায় পাঠিয়ে রাখলাম, এই ঘটনা যদি কোনোদিন মানুষের মন থেকে মুছে যায়, তাহলে ওটা কাজে আসবে। এরকম নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি হাতে বিচার না চেয়ে, বিচার ছিনিয়ে নেওয়াটা বেশি কার্যকরী।


ভালো থেকো। 


ও, আরেকটা জিনিস। মহাকাশে কোনো আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর সামনাসামনি হলে যাতে যদি নিরাপদে গা ঢাকা দিতে পারি, তাই আমি আর আমার ব্রিটিশ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্স মিলে এই নতুন ঘড়ির মতো যন্ত্র টি আবিষ্কার করেছি। নাম দিয়েছি ইনভিসিওয়াচ। এই যন্ত্রে একটা সামান্য চাপ দিলে মানুষ ৩ ঘন্টা অবধি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।  সেটা আজ সত্যিই কাজে লেগে গেলো।  মানিক বাবু বেঁচে থাকতে এটা বানাতে পারলে খুশি হতাম। 


তোমার শুভাকাঙ্খী,

শ্রী ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু 


"সাংঘাতিক লোক মশাই " বলে উঠলেন জটায়ু।  

47 views
bottom of page